রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
দেশ ভাগের প্রাক্বালে ১৯৪৭ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় পাঞ্জাবের মালেরকোটলাই ছিল একমাত্র জেলা যেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। পাঞ্জাবের লাখ লাখ মুসলিম যখন পাকিস্তানে চলে যাচ্ছিলেন তখন মালেরকোটলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা ভারতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে চলমান কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন মালেরকোটলার বর্তমান প্রজন্ম। দিল্লির সিংঘু সীমান্তে জড়ো হয়ে তারা আবারও শিখ-মুসলিম ভ্রাতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
মালেরকোটলা থেকে দুই সপ্তাহ আগে এসেছেন আইনজীবী মবিন ফারুকী। আন্দোলনস্থলে মুসলিমরা যে লঙ্গর বসিয়েছে সেখানে কাজ করছেন তিনি।
ফারুকী বলেন, ‘আমাদের শিখ ভাই-বোনদের প্রতি সমর্থন জানাতে এই লঙ্গর। যদিও এখানকার অন্যান্য লঙ্গরের তুলনায় আমাদেরটি ছোট, তবুও লোকজনদের জর্দা আর নামকিন চাওয়াল খাওয়াতে পেরে আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি।’
মালেরকোটলার আরেক অধিবাসী তারিক মনজুর বলেন, ‘এই খাবারটি (জর্দা) আমরা বিয়ে ও বিশেষ উপলক্ষে পরিবেশন করে থাকি। এই আন্দোলনও একটি বিশেষ উপলক্ষ, তাই আমরা কৃষক ভাইদের জন্য জর্দা তৈরি করেছি।’
ফারুকী, মনজুরসহ মালেরকোটলার আরও ৫০ স্বেচ্ছাসেবী তাদের ইতিহাসের কথা স্মরণ করছিলেন যখন মুসলিমরা শিখদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। দশম শিখ গুরু– গুরু গোবিন্দ সিংয়ের দুই সন্তান সাহিবজাদা ফতেহ সিং ও সাহিবজাদা জোরাওয়ার সিংকে অত্যাচারের জন্য যখন সিরহিন্দের গভর্নর নির্দেশ দেন, মালেরকোটলার নবাব শের মোহাম্মাদ খান সেই নির্দেশ মানতে রাজি হননি। এর ফলে গুরু গোবিন্দ সিংয়ের শ্রদ্ধাভাজন হয়ে ওঠেন নবাব খান।
মনজুর বলছিলেন, মুসলিমদের মতো শিখরাও ভারতে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ‘এটা নিয়ে আমরা গর্বিত না কারণ আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমাদের পূর্বপুরুষরা কখনোই পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কথা ভাবেননি এমনকি যখন সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে চরম বিদ্বেষ চলছিল তখনও না’, বলেন মনজুর।
ফতেহগড়ের এক গ্রাম-প্রধান দালজিন্দার সিং জর্দা খেতে খেতে বলছিলেন, ‘এই মানুষগুলো আমাদের ভাই। আর আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে, পাঞ্জাবে এই অসাধারণ সম্পর্ক বজায় রাখতে শত শত বছর ধরে তারা অবিচল আছে।’ সূত্র-টাইমস অব ইন্ডিয়া।